ব্যবস্থাপনা নীতিমালা / Principles of Management
ব্যবস্থাপনা নীতিমালা
Principles of Management
ব্যবস্থাপনা নীতি হলো ব্যবস্থাপনার
কার্য্ ও কর্ম্সূচি সূচারুরূপে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সত্য বলে প্রতিষ্ঠত কিছু পূর্র্নির্ধারিত
নিয়ম বা নিয়ন্ত্রক বিশেষ। যাকে এক কথায় ব্যবস্থাপনা কর্ম্সূচি বাস্তায়নের সুনির্ধারিত
নিয়ম বলা হয়। ব্যবস্থাপনা পারিপাশ্বিক অবস্থার দ্বারা সব সময় প্রভাবিত হওয়ায় অদ্যাবধি
এক্ষেত্রে কোন ধরাবাঁধা নিয়ম-নীতি নির্দিষ্ট করা সম্ভব হয়নি। এ করণে যুগে যুগে বিভিন্ন
মনীষীগণ বিভিন্ন অবস্থা পর্যবেক্ষন ও পর্যালোচনা করে বিভিন্ন প্রকারের নীতিমালা নির্দিষ্ট
করার প্রয়াস পেয়েছেন। তবে H. Fayal প্রদত্ত মূলনীতিসমূহকে অদ্যাবধি
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ্ মূলনীতি হিসাবে সর্ব্মহলেই
গ্রহণ করা হয়।
তার প্রদত্ত নীতিমালা নিম্ন
ছকে তুলে ধরা হলো :
১.
কার্য্ বিভাগ ২.
ক্ষমতা ও দায়িত্বে সমতা রক্ষাণ ৩.কেন্দ্রীকরণ
ও বিকেন্দ্রীকরণ ৪.
আদেশের ঐক্য ৫.
নির্দেশনার ঐক্য ৬.
সাধারণ স্বর্থ্য নিজের স্বার্থ্ ত্যাগ ৭.
জোড়া-মই-শিকল |
৮.
নিয়মানুবর্তিতা ৯.
শৃঙ্খলা ১০.
পারিশ্রমিকের নীতি ১১.
সাম্যতা ১২.
চাকরির স্থায়িত্ব ১৩.
উদ্যোগ |
১.
কার্যবিভাগ (Division of work) : প্রতিষ্ঠানের
কাজকে প্রথমেই অত্যন্ত সতর্ক্’তার সাথে তার
প্রকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করা উচিত। এছাড়া প্রত্যেক বিভাগ ও কর্মীর কাজের
আওতা ব্যবস্থাপনার পক্ষ হতে নির্দিষ্ট হওয়া বাঞ্ছনিয়। যাতে প্রত্যেকের য্যেগতা ও সামর্থ্যের
সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায়। এতে প্রত্যেক কর্মী নিজ নিজ কার্যক্ষেত্রে বিশেষায়িত জ্ঞান
অর্জ্ন করতে পারে।
২.
ক্ষমতা
ও দায়িত্বের সমতা রক্ষাণ (Equalisation between
authority and responsibility) : মানুষ
দিয়ে কাজ করতে হলে তাদেরকে প্রয়োজনীয় কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা অর্প্ণ করা আবশ্যক। এরূপ ক্ষমতা
ও দায়িত্ব সমান হওয়া অপরিহার্য্। অন্যথায় কার্যক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। কাউকে হিসাব
নিরীক্ষণের দায়িত্ব দিলে তাকে হিসাবের খাতাপত্র তলব করার ও দেখার ক্ষমতা দিতে হয়।
৩.
কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ (Centralisation and decentralization) : সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠানের
উচ্চস্তরে কেন্দ্রীভূত থাকলে তাকে কেন্দ্রীকরণ এবং নিচের দিকে ছেড়ে দেয়া হলে তাকে বিকেন্দ্রীকরণ
বলে । এই নীতির মূলকথা হলো সম্পূর্ণ্ কেন্দ্রীকরণ এবং সম্পূর্ণ্ বিকেন্দ্রীকরণ কোনোটিই
এককভাবে অনুসরণযোগ্য নয়। বরং গুরুত্বপূর্ণ্ সিদ্ধান্ত উচ্চস্তরে এবং কম গুরুত্বপূর্ণ্
সিদ্ধান্ত নিচের স্তরে নেয়া উচিত ।
৪.
আদেশের ঐক্য (Unity of command) : কর্ম্রত প্রত্যেক ব্যক্তি প্রত্যক্ষভাবে
একজন মাত্র ঊধ্বতন (Boss) এর অধীনে থাকবে
বা একজনের নিকট থেকে আদেশ পাবে এটাও ব্যবস্থাপনার অন্যতম মূলনীতি।(Weihrich ও
Koontz এ সম্পর্কে বলেন, ”Unity of command means that employees
should receive orders from one superior only.” ঊধ্বতন, আদেশদাতা বা বস একাধিক
হলে কর্মীর পক্ষে সকলের আদেশ অনুসরণে সমস্যা দেখা দেয় ও প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি
হয়।
৫.
নির্দেশনার ঐক্য (Unity of direction)
: এই নীতির অর্থ্ হলো , সকলের সমবেত প্রচেষ্টাকে
একটি মূল উদ্দেশ্যমুখী করতে ধারাবহিক ও সমন্বিত নির্দেশনা কার্য্ক্রম পরিচালনা করা
প্রয়োজন। এজন্য পূর্ব্ পরিকল্পনা ও প্রদত্ত নির্দেশনার সাথে মিল রেখে পরবর্তী নির্দেশনার
বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট করা আবশ্যক।
৬.
সাধারণ স্বার্থে নিজের স্বার্থ্ ত্যাগ
( Subordination of own interest to
general interest) : প্রতিষ্ঠানিক
স্বার্থ্কে সর্ব্‘দা ব্যক্তি ও গোষ্ঠি স্বার্থের উর্ধ্বে স্থান দেয়া আবশ্যক। অন্যথায়
প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্যার্জ্ন ও সংশ্লিষ্ট সকলের সর্বোচ্চ কল্যাণ লাভ সম্ভব নয়। এজন্য
প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিচ পর্য্ন্ত সর্ব্স্তরের জনশক্তিকে এ আদর্শে উদ্ব ুদ্ধ করা
উচিত।
৭.
জোড়া-মই-শিকল (Scalar
chain) : সংগঠনের সর্বোচ্চ স্তর হতে
সর্বনিম্ন স্তর পর্য্ন্ত ব্যবস্থাপনার পর্যায়ভুক্ত লোকদের এমনভাবে পারস্পরিক সম্পর্ক্’যুক্ত
করা আবশ্যক যাতে তা সমন্বিত শিকলের রূপ ধারণ করে। এই শিকল কর্তৃত্বের প্রবাহ ও যোগাযোগের
পথ নির্দেশ করে । বিষয়টিকে নিম্নের চিত্রের সাহায্যে দেখানো হলো :
৮.
নিয়মানুবর্তিতা (Discipline)
: প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত নিয়ম-নীতির প্রতি
আনুগত্য ও শ্রদ্ধা প্রদর্শ্নকেই নিয়মানুবর্তিতা বলে। এক্ষেত্রে মনে করা হয় যে, প্রাতিষ্ঠানিক
নীত ও নিয়মের প্রতি সকলের শ্রদ্ধাবোধ ও তা মান্য করার ঐকান্তিক আগ্রহ সফলতা অর্জনের
জন্য অপরিহার্য্। H. Fayol প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরে নিয়মানুবর্তিতা প্রতিষ্ঠার জন্য গতানুগতিক
শাস্তি দানের নীতির পরিবর্তে উত্তম তত্ত্বাবধানের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন ।
৯.
শৃঙ্খলা (Order) : এ নীতির লক্ষ্য হলো যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য
স্থানে এবং সঠিক বস্তুকে সঠিক স্থানে স্থাপন এবং প্রতিষ্ঠানে মানব শৃঙ্খলা ও বস্তুগত
শৃঙ্খলার ব্যবস্থা করা। এতদ্ব্যতীত সকল ব্যক্তি ও উপায়-উপাদন যাতে সঠিক নিয়মে শৃঙ্খলার
সাথে কার্য্ সম্পাদন করতে পারে তাও নিশ্চিত করা আবশ্যক।
১০.
পারিশ্রমিকের নীতি (Principle
of remuneration) : প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের
কাজের প্রকৃতি, সময়, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনায় সুষ্ঠ ও ন্যায্য বেতন কাঠামো
স্থির করা আবশ্যক। যাতে তারা সকলে সন্তুষ্টির সাতে কাজ করতে পারে । Griffin
ফেওল প্রদত্ত নীতি সম্পর্কে বলেন,“Compensation for work done should be fair to
both employees and employers.”
১১.
সাম্যতা (Equity)
: সবার প্রতি সমান আচার ও স্নেহ প্রদর্শ্ন
করা এ নীতির লক্ষ্য। যাতে অধস্তনরা, ঊর্ধ্বতনের প্রতি উত্তম মনোভাব এবং যথাযথ শ্রদ্ধা
ও আনুগত্য পোষণ করতে পারে। ঊর্ধ্বতন যদি অধস্তনদের প্রতি সমান আচরণ করে, ন্যায় বিচার
প্রতিষ্ঠা করে তবে ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন সম্পর্ক্ খারাপ হওয়ার কোন কারণ থাকে না।
১২.
চাকরির স্থায়িত্ব (Stabilisation
of service) : প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত
কর্ম্চারীদের চাকরির স্থায়িত্ব বিধান করা উচিত। এতে কর্মীদের নিরাপত্তাবোধ ও মানসিক
স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি পায়। ফলে তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা বাড়ে ।
১৩.
উদ্যোগ (Initiative)
: নতুন কোন পদ্ধতি বা উপায় উদ্ভাবন ও আবিষ্কার
করার জন্য কর্মীদেরকে উৎসাহিত, অনুপ্রণিত ও যথোপযুক্ত সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। এতে প্রতিষ্ঠানের
প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ে ও উন্নততর কর্মনৈপূণ্য প্রদর্শ্ন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়।
১৪.
একতাই বল (Esprit de
corps) : এরূপ নীতির মূলকথা হলো প্রাতিষ্ঠানিক
উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে সকল পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা ও অধস্তনদেরকে সর্ব্’দা ঐক্যবদ্ধ
থাকা উচিত এবং এজন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। যদি প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিচ পর্য্ন্ত
সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ পরিচালনা করে তবেই
প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন সম্ভব ।
পরিশেষে বলা যায় , বর্ত্’মান বৃহদায়তন কর্ম্কান্ডের জগতে যেই প্রতিষ্ঠান
ব্যবস্থাপনা কার্য্ সম্পাদনে উপরোক্ত নীতিমালা বা আদর্শ্ সফলতার সাথে ব্যবহার করে বা
এগুলোর যথাযথ অনুসরণ করে চলতে পারে, তার পক্ষেই তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ্ ব্যবসায় জগতে
ততোটা সফলতা লাভ সম্ভব হয়।
No comments