TjT

করনা প্রতিরোধে হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন। অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ্ করা থেকে বিরত থাকুন। অ্যালকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতের তালুতে নিয়ে ( 20 সেকেন্ড ) ভাল করে পরিষ্কার করুন। ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনা যুক্ত ডাস্টবিনে ফেলুন। পরিচিত বা অপরিচিত ব্যক্তির সাথে হাত মেলানো বা আলিঙ্গন করা থেকে বিরত থাকুন। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।

কবিতা : কালো উপাখ্যান / কেষ্ট মন্ডল

 

কালো উপাখ্যান

কেষ্ট মন্ডল

 


দুই মেয়ের পর আবার একটি মেয়ে

মহালয়ার পূর্ন্ তিথীতে সে এলো বলে

মন খারাপের দিনেও বাবা নাম রেখেছিলো গৌড়ি

কিন্তু ভাগ্যর পরিহাস

প্রকৃতি এসে ধরা দিলো তার কারো বরনের উপর

তাই পাড়ার লোক আদর করে কেউ কালি আবার

কেউ ফেয়ার এন্ড লাভলী বলেও ডেকে বসতো

ছোট্ট মেয়েটিও এক মুখ হাসি নিয়ে

তাদের কাছে এসে দাঁড়াত

বেঁচারা তখন বুঝত না

এই দুনিয়া শুধু রং ই  চেনে

রং ই জানান দেয় সে ভালোবাসার নাকি অবহেলার

এ সব শুনে মা দুঃখ পেত খুব

কিন্তু মা তো দুঃখই পায়

আজীবন মেয়ের জন্য

সে সামান্য শরীর খারাপই হোক বা অন্য কিছু

যখন বড় হলো স্কুলে গেলো

তখন বুঝলো সে বর্ণের অভিশাপ নিয়ে জন্মেছে

না শিক্ষকরা ভালোবাসতেন

ছাত্রী কালো কি ফর্সা

বেটে কি লম্বা এতে তাদের কি

তবে পুঁজোর আগে দলবেঁধে

পার্লারে যেতে চাইলে

বান্ধবীরা মুচকি হাসতো

সে বুঝতো তাদের চোখের ভাষা

অসহ্য অব্যক্ত যন্ত্রনায় ছটফট করত

কালো চামড়ার নিচে লুকিয়ে থাকা

বুকের ভেতর টা

বাজারে গেলে অনেকেই বলেই বসতো

এই রং টা নিয়ো না

তুমি তো কালো এইটা মানাবে না তোমায়

মাথা নিচু করে চোখের জল লুকাতে হতো

অনেক নিষ্পাপ শিশু ও সর্র্ সম্মুখে বলে দিতো

তুমি ছুঁয়োনা  দিদি কলো হয়ে যাব

তখন মনে মনে সে চিৎকার করে উঠত

হে ঈশ্বর আমি তোমার

এই রং তোমার

তোমারি হাজার বজ্রপাতে

তোমার এই অপবাদ তুমি ফিরিয়ে নাও আজ

কিন্তু ঈশ্বর বড়ই বধির

মানুষ মানুষকে ছুঁলে জাত যায় না রং এউ না

কি জানি সে শিক্ষা কে দিয়েছিলো

এই অবদ শিশুর হয়তো তার ফর্সা মা

কখানো মজা করে বলেছিলো,

টিভির ফর্সা হওয়ার বিজ্ঞাপনে চোখ রাখতো মেয়েটি

অধির আগ্রহে

কিন্তু সবি চমক

তার কালো রঙ্গের আত্মবিশ্বাসে

কেউ চির ধরাতে পারেনি কখনো

আসলে জন্মটাই ছিলো তার গভীর অমাবস্যায়

মেয়েটি বড় হলো ভূগলে এম. এ করলো

কিন্তু এই আলো তার কলো ঘোচাতে পারলো না

প্রেমের বসন্ত কিন্তু মহান

সে কোন ভেদাভেদ করে না

সে  যেমন ফর্সার মনে আসে

তেমন আসে কলোর মনেও

তাই প্রেম পুরুষ তার পাথর চপা ছিলো

হৃদয়ের গহন আঁধারে

অপ্রকাশিত ভাবে

এ দিকে বয়স বাড়ে

বিয়ে না হলে একদিন

নষ্টার বাঁকা চাহনি সইতে হবে

সবাই উপদেশ দেয় বিয়ের কাথা বলে

কিন্তু কেউ সম্বন্ধ করে না

খালি আসে আর যায়

খরচের উপর খরচ

নিঃস্ব বাবও বিরক্ত হয়ে ওঠে

কালো হওয়ার সব দায় চাপায় মেয়েটির উপর

মা মুখে শাড়ির আঁচল ধরে হাহাকার লুকাত

সে দিন ও ফিরে গেছে একদল লোক

কলো বলে গেছে মুখের উপর

মেয়েটা সেদিন  শেষ বারের মত

তার বাবার কাছে একটা

আবেদন রেখে বলেছিলো

বাবা দাওনা একশ টা টাকা

একটা শীতের ক্রিম কিনে আনি

বাবা জ্বলে উঠেছিলো আগুনের মত

যা রং আর ক্রিম মাখতে হয় না

কথাটা তীরের মত বিধে গেলো বুকে

সারাজীবন শুধু রং আর রং

শুধু বর্ণ্ আর লিঙ্গ ভেদের অপমান

পরের দিন সকালে দড়জা ভেঙ্গে ঘরে ডুকতে হলো

দেখা গেলো গৌড়ীর নিথর ঝুলন্ত দেহ

তার সমস্ত উচ্চ শিক্ষার মানপত্র

তার কলো ঝুলন্ত দেহের নিচে

যত্র তত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে

মৃত হাতের আঙ্গুলে ফাঁকে ধরা

একটা কাগজে শুধু লেখা ছিলো

আমার মৃত্যুর রং কালো।




No comments

Powered by Blogger.

আসুন করনা সম্পর্কে সচেতন হই সুস্থ থাকি ।