টুটুলের ছোট বেলার কথা।টুটুল তখন প্রায়মারী স্কুল পার করে সবে মাত্র হাই স্কুলে উঠেছে।হাই স্কুলের পাশেই টুটুলদের বাড়ি। হাই স্কুলের পিছন দিক টায় ছিল অনেক গাছ গাছালি। তন্মধ্যে একটা বিরাট উচু গাব গাছও ছিল।গাব গাছ টি তে প্রচুর গাব ধরতো।তবে লোক মুখে প্রচলিত আছে গাব গাছ নাকি ভালো না।অনেক মানুষ নাকি এই গাব গাছে উঠতে গিয়ে নানান জিনিষ দেখে ভয়ে গাছ থেকে পড়ে গেছে।তবে টুটুল সেসবের কিছু পরোয়া করেনা।সে প্রত্যেকবারই গাব পাকার সময় গাব গাছে উঠে গাব পেরে খায়।তবে এবারের কাহিনী টা একটু ভিন্ন ছিল।গাব পাকার সময় এসে গেছে।গাছে ঝুলঝে হলুদ বর্ণের স্বাদালো ফল গাব।যদিও খেতে একটু কস কস লাগে তবুও গাব ফল টা টুটুলের ভারী প্রিয়।রাতের বেলা এই গাছের ধারের কাছেও কেউ যায় না।সবাই ভয় পায় এই গাব গাছ কে।একদিন রাতের বেলা টুটুল ঘরে সুয়ে আছে এর মধ্যে টুটুলের দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এসে টুটুল কে বললঃএই টুটুল চল যাবি স্কুলের পিছনের গাব গাছে কত্ত গাব পাইক্কা আছে চল গিয়া পাইরা আনি।
টুটুলঃ আরে এত্তো রাইতের বেলা গাব গাছের কাছে যাওন কি আমগোর ঠিক হইবো?
বন্ধুরাঃআরে বেটা তুই আছোস না তুই থাকতে টেনশন কিহের? চল বেটা মজা কইরা গাব খাওন যাইব।
আচ্ছা তোরা যহন কইতাছোস চল যাই।
টুটুল তার বন্ধুদের কথায় চলে গেল স্কুলের পিছনে গাব গাছের কাছে।
প্রচন্ড অন্ধকার রাত্রি তাই টুটুল একটা টর্চ লাইট নিয়ে বের হল।গল্প করতে করতে তারা গাব গাছের কাছে গিয়ে পৌছালো। এবার টুটুলের গাছে ওঠার পালা।টুটুলের মনে আজকে জানি কেমন ভয় ভয় লাগছিল।টুটুল গাছে ওঠার জন্য প্রস্তুতি নিল এবং গাছে ওঠা শুরু করল।নিচে দাঁড়িয়ে আছে টুটুলের দুই বন্ধু।এই অন্ধকার রাত্রিতে গাব গাছে উঠতে টুটুলের পা কাপছিল মনে হচ্ছিল সে যেন এখনি গাছ থেকে পড়ে যাবে। কিন্তু নিচে যে তার দুই বন্ধু দাঁড়িয়ে আছে ভয় পেলে যে চলবেনা।টুটুল গাছে উঠে গাব পারা শুরু করল।কয়েকটা গাব পেরে যখন সে নিচে তাকালো তখন তার পরানে যেন আর পানি রইল না।কোথায় তার বন্ধুরা? নিচে তো কেউ দাঁড়িয়ে নেই!!
টুটুল ভয়ে কাপা কাপা কন্ঠে তার বন্ধুদের কে ডাক দিল কিন্তু কোন সাড়া শব্দ মিলল না।টুটুলের কাছে মনে হল গাব গাছ টা যেন নড়ছে এবং খুব জোরে জোরে নড়ছে ভয়ে টুটুল গাব গাছ থেকে নামতে যাবে আর এমন সময় টুটুল দেখতে পেল গাছের মগ ডালে সাদা কাপড় পরে কে যেন পা ঝুলিয়ে বসে আছে!!এই ভয়ংকর পরিবেশে এই ভয়ংকর দৃশ্য টুটুল আর সহ্য করতে পারলো না।গাছে থেকে নামার শক্তিও যেন সে হারিয়ে ফেলেছে।তবুও সে গাছ থেকে নামার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়া যাচ্ছে কিন্তু সে তার শরীরের প্রচন্ড কাপুনির কারণে ভালো ভাবে নামতে পারছে না।টুটুল কোন মতে হাত পা ছিলে গাছ থেকে নামলো।কিন্তু নেমে সবে মাত্র মাটিতে পা দিয়েছে আর এরই মধ্যে সে দেখতে পেল গাছের উপরের সেই জিনিষ টা টুটুলের সামনে পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে আছে।টুটুলের ভাষ্যমতে সেই ভয়ানক জিনিষটার চুল ছিল অনেক বড় বড় এবং পুরো শরীর সাদা কাপড়ে ঢাকা।টুটুল ভয়ে এমন দৌড় দিল যে তার মনে হচ্ছিল এখনি কেউ তাকে পিছন থেকে ধাওয়া করছে।এক দৌড়ে সে তাদের বাড়ির উঠানে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।সকালে তার যখন ঘুম ভাঙলো তখন সে দেখল তাকে ঘিরে তার মা বাবা এবং তার বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে।তার মধ্যে গত রাতে টুটুলকে ডেকে নিয়ে যাওয়া সেই দুই বন্ধুও আছে। টুটুল তাদের কে দেখে রাগে জিজ্ঞাসা করলঃকিরে বদমাইশরা কালকে রাইতে আমারে রাইখা তোরা কই গেছিলি?
কিন্তু তাদের উত্তরে টুটুল হতবাক হয়ে যায়। তারা নাকি গতরাতে টুটুলের বাড়িতেই আসেনি এবং এর প্রমাণও তারা টুটুলকে দেয়।এই কথা শোনার পর টুটুল আড়ো অসুস্থ হয়ে যায়। সেই রাতে কারা টুটুলকে গাব গাছের কাছে নিয়ে গিয়েছিল তার উত্তর টুটুল আজও খুজে পায় নি।তবে এই ঘটনার পর গাব গাছের কাছে জাওয়া তো দূরে থাক স্কুলের পিছনেও টুটুল আর কোন সময় যায় নি।এবং ঐ গাব গাছে আর কেউ কোন দিন ওঠার সাহস করেনি।
No comments