TjT

করনা প্রতিরোধে হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন। অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ্ করা থেকে বিরত থাকুন। অ্যালকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতের তালুতে নিয়ে ( 20 সেকেন্ড ) ভাল করে পরিষ্কার করুন। ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনা যুক্ত ডাস্টবিনে ফেলুন। পরিচিত বা অপরিচিত ব্যক্তির সাথে হাত মেলানো বা আলিঙ্গন করা থেকে বিরত থাকুন। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।

গল্প - "অশ্রুজল"

- তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও? বিয়ের পরে আমার মেয়েকে কি খাওয়াবে?

প্রশ্নটা শুনে চমকে উঠলো সালমান। এমন প্রশ্ন সে আশা করেনি। কিন্তু এমন প্রশ্নই করা হবে তা আগেই ভেবে রাখা উচিত ছিল। প্রশ্নটি করেছে ফাহিমার বাবা। ফাহিমার সাথে সালমানের তিন বছরের সম্পর্ক। কিছুদিন ধরে ওর বিয়ের কথা চলছে। এইজন্য সালমান সরাসরি এসেছে ওর বাবার সাথে কথা বলতে। সালমানের দেরি দেখে ফাহিমার বাবা আবার প্রশ্ন করলেন,

- কথা বলছো না কেন? উত্তর দাও!

-- কয়দিন ধরে ফাহিমাকে বিয়ে দেয়ার কথা আপনারা ভাবছেন। এইজন্য আমি এসেছিলাম ওর সাথে আমার সম্পর্কের কথা জানাতে।

- এর মানে তুমি এখন বিয়ে করবে না?

-- করবো। বলতে পারেন সেই প্রস্তাব নিয়েই এসেছি।

- বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে পাত্র নিজে কখনো আসে এই প্রথম দেখলাম। তোমার বাবা মা কোথায়?

-- বাবা মারা গেছেন। মা থাকেন গ্রামে।

- শুনে খারাপ লাগলো। তবে মাকেও তো সাথে আনতে পারতে? নাকি তার অবস্থা সভ্য সমাজে প্রকাশ করার মতো না!

কথাটি বলে হো হো করে হাসতে লাগলো ফাহিমার বাবা। সালমান এই কান্ড তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। তাকে অনেক অপমান করা হবে এই ইঙ্গিত ফাহিমা আগেই দিয়েছিলো। কিন্তু অপমানের মাত্রা এত গুরুতর হবে তা সালমান আগে ভাবেনি। ফাহিমা বলেছিলো সে সব সামলে নিবে। সামলে নেয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফাহিমার বাবা আবার বলতে শুরু করলো,

- আমার আগের প্রশ্নের উত্তরটি দাও। বিয়ের পরে বউকে কি খাওয়াবে?

-- স্যার, আমি চাকরির চেষ্টা করছি। চাকরি হলেই সব সমাধান হয়ে যাবে।

- চাকরি পাওয়া এতই সহজ?

-- স্যার, আপনি মনে হয় জানেন না আমি কোথায় পড়ি!

- জানি জানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ো। তাতে কি আসে যায়! লোক আর পয়সা না থাকলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যা হাঁড়িভাঙ্গা বিশ্ববিদ্যালয়ও তা!

সালমান চুপ করে রইলো। এর সাথে তর্ক করা অর্থহীন। এই লোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর মূল্য বুঝবে না। ফাহিমার বাবা চরম বিরক্তি নিয়ে বলল,

- এখন তুমি যেতে পারো। আমার অনেক সময় নষ্ট করেছো। চাকরি জোগাড় করে আবার দেখা করতে এসো। মনে হয়না আর দেখা হচ্ছে তোমার সাথে। হাহাহাহাহা!

লোকটাকে অট্টহাসি দেয়া অবস্থায় রেখে সালমান বের হয়ে এলো। বের হওয়ার জন্যই এতক্ষণ সালমান চেষ্টা করছিলো, যাক আপাতত বাঁচা গেল। ফাহিমার চিন্তা আপাতত দূরে সরিয়ে চাকুরীর বাজারে নেমে পড়া দরকার। এইসব ভাবতে ভাবতে সামনে এগুতে থাকলো সালমান।

(২)

দেড় বছর পর....

সালমান অফিস থেকে বাসায় ফিরলো। ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে ও। মা সালেহা এখনো গ্রামে থাকেন। প্রতিদিন মাকে ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নেয়া হয়। কিন্তু মা শহরে এসে থাকতে চায় না। সালমান দ্রুত গোসল সেড়ে নেয়। প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে গোসল করা তার অভ্যাস। তারপর ভাত খেয়ে শুয়ে পড়ে। খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়াও সালমানের দীর্ঘদিনের অভ্যাস। আজকে ঘুমানোর পূর্ব মুহূর্তে ফাহিমা ফোন দিলো। এই মেয়ে প্রায়ই ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করে। ফোন ধরতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না আজকে। তবুও সালমান ফোন ধরলো,

- হ্যালো!

-- হ্যালো সালমান, তুমি কোথায়?

- কোথায় আবার! বাসায়।

-- আমাকে একা ফেলে তুমি কোথায় গেলে?

সালমান ফোন কেটে দেয়। আজগুবি কথা তার শুনতে ইচ্ছে করে না। সালমান এখন চাকুরী করে আর ফাহিমার বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের দুজনের জীবন এখন আলাদা। শুধু শুধু ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করার কোন মানে নেই। ফাহিমা আবার ফোন দিচ্ছে। সালমান ফোন বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লো।

(৩)

পরেরদিন...

অফিসে আজ কাজের অনেক চাপ। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে আধাঘণ্টা আগেই। তবুও সালমান বসে হিসাব মেলাচ্ছে। আরো আধাঘণ্টা লাগবে হিসাবটা শেষ করতে। অফিসের পিয়ন এসে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সালমান বিরক্ত হলো। কাজের সময় বিরক্ত করলে ভাল লাগেনা তার। জিজ্ঞেস করলো,

- কি ব্যাপার?

-- স্যার, আপনাকে একজন খুঁজতে এসেছে!

- কে? নাম কি?

-- নাম জিজ্ঞাসা করি নাই। মেয়ে মানুষ।

- মেয়ে মানুষ না ছেলে মানুষ আমি কি জানতে চেয়েছি? যাও সামনে থেকে।

সালমান উঠলো না। হিসাব করতে থাকলো। হিসাব পুরোটা শেষ করেই উঠলো সালমান। কিন্তু নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারলো না! কারণ তাকে খুঁজতে এসেছে ফাহিমা। এই মেয়ে এত কেন জ্বালাচ্ছে তাকে?! এতদিন ফোন দিয়ে জ্বালাতো এখন অফিসে এসে জ্বালায়। সালমান না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিলো। ফাহিমা প্রায় দৌড়ে এলো,

- এই সালমান, আমি তোমাকে নিতে এসেছি।

-- নিতে এসেছি মানে! আমি তোমার সাথে যাবো কেন?

- কি বলছো আজেবাজে কথা।

ফাহিমা সালমানের হাত ধরে ফেললো। আশেপাশের মানুষ কেমন করে যেনো তাকাচ্ছে। সালমান আর কিছু বলল না, এখন কিছু করা যাবে না। মানুষ ভাল চোখে দেখবে না।

ফাহিমা সালমানকে সাথে নিয়ে রিকশায় উঠলো। ১৫ মিনিট রিকশা চলল, কেউ কোন কথা বলল না। সালমানের অস্বস্তি লাগছে, ফাহিমা তাকে শক্ত করে ধরে আছে। রিকশা এক মুদি দোকানের সামনে থামলো। ফাহিমা সালমানকে বলল, তুমি বাসায় যাও আমি একটু বাজার নিয়ে আসছি।

ফাহিমা বাজার আনতে গেছে প্রায় ১০ মিনিট হয়ে গেল। সালমান এখনো মুদি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে না কোথায় যাবে! ফাহিমার বাসা সে চিনে না! কিভাবে যাবে। ফাহিমা ফিরে আসুক, তারপর যাওয়া যাবে।

ফাহিমা ফিরে দেখলো সালমান আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে।

- তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমি না বললাম বাসায় চলে যেতে?

-- আমি তোমার বাসা কিভাবে চিনবো?

- সত্যিই তুমি বাসা চেনো না?

-- না!

- তুমি কেন আমার সাথে এমন করো বলো তো!

সালমান কিছু বলল না। কি বলবে এই মেয়েকে! সে কি করেছে! এই মেয়ে অদ্ভুত সব কান্ড কারখানা ঘটিয়ে যাচ্ছে কেন কে জানে!

(৪)

ঘরে ঢুকে সালমান ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে পড়লো। তা দেখে ফাহিমা তেতে উঠলো, এখানে বসলে কেন? গোসলখানায় যাও। গোসল শেষে একসাথে খাবো।

সালমান অবাক হয়ে গেল। এত রাতে আরেকজনের বাসায় যেয়ে কেন সে গোসল করবে?! সালমান প্রশ্ন করলো,

- তোমার স্বামী কোথায়? আমি কেন গোসল করবো এখানে? হঠাৎ সে এসে পড়লে আমি কি করবো? তোমার কি সমস্যা আমাকে বলো, তারপর আমি চলে যাবো!

ফাহিমা কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তারপর বলল,

- সালমান, গত ছয় মাস ধরে তুমি এই কান্ড করেই যাচ্ছো। এই বাড়ি তোমার, আমি তোমার স্ত্রী। তবুও তুমি না চেনার ভান করো, বাসায় ফেরো না। আমি কি এখন তোমাকে আমাদের বিয়ের ছবি দেখাবো?

সালমান চিন্তিত বোধ করলো। এই মেয়ে কি বলছে এইসব! কোন ফাঁদে পড়লো! ওর স্বামী যেকোনো সময় এসে পড়লে ওকে মেরেই ফেলবে! ফাহিমা প্রচুর রেগে গেছে। আপাতত এখন গোসলখানায় যাওয়া যাক। কিছুটা চিন্তা করার সময় পাওয়া যাবে।

(৫)

সালমান ভেবে পাচ্ছেনা এখন কি করা উচিত। গোসলখানায় বসে আছে চুপচাপ। অনেক ভেবে চিন্তে মাকে ফোন দিলো। আজকে সারাদিনে মায়ের সাথে কথা হয়নি।

- হ্যালো মা, কেমন আছো?

-- তুই কেমন আছিস বাবা?

- ভাল আছি মা, তোমার শরীরের কি অবস্থা?

-- আল্লাহ ভাল রাখছে বাবা। তুই আমাকে এত টাকা কেন পাঠাস? আমার এত টাকা লাগেনারে বাবা।

- না লাগলেও রেখে দাও। কখন কোন কিছু কিনতে মন চাইলে কিনে ফেলবে।

-- আমার কিছু কেনা লাগবে না। তুই কবে আসবি? তোরে দেখতে মন চাচ্ছে অনেকদিন ধরে।

- চলে আসবো, অফিস ছুটি হলেই চলে আসবো...

-- কিছু বলবি বলে মনে হচ্ছে?

- না মা। কিছু বলবো না। তুমি ভাল থেকো।

সালমান ভেবেছিলো মাকে কিছু বলবে ফাহিমার ব্যাপারে। কিন্তু কিছু বলল না। সে এতরাতে আরেক লোকের গোসলখানায় বসে আছে এটি শুনলে চিন্তায় মায়ের সারারাত ঘুম হবেনা।

ফাহিমা দরজায় নক দিচ্ছে, "তাড়াতাড়ি বের হও। ভাত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।"

(৬)

সালমান ভেবে পাচ্ছেনা কথাটা কিভাবে বলবে। অনেক সাহস সঞ্চয় করে বলল, "খাওয়াদাওয়া তো হলো। এবার আমি চলে যাবো?"

ফাহিমা এই কথা শুনে লাফিয়ে উঠলো। বলল,

- চলে যাবে মানে? ফাইজলামি পেয়েছো তুমি? এখন চুপচাপ ঘুমাও। আর এই চাবিটা কিসের? তোমার পকেটে কেন?

-- আমার বাসার চাবি।

- তোমার বাসা আবার কোনটা?

সালমান চুপ করে রইলো। একে বাসার ঠিকানা দিলে ঝামেলা করতে পারে। ফাহিমা চাবিটা জানালা দিয়ে ফেলে দিলো। সালমান মনে মনে হায় হায় করে উঠলো। সে এখন বাসায় ঢুকবে কি করে! আজকে মনে হয় এখানেই ঘুমাতে হবে। সালমান আর উচ্চবাচ্য করলো না। ফাহিমাও বাতি নিভিয়ে চলে গেল। সালমান কিছুটা হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কারণ এই মেয়ে এখন তার সাথে ঘুমাতে চাইলে বিপদে পড়তে হতো। এই পাগল মেয়ে এখন তাকে স্বামী ভাবছে! ফাহিমা পাগল হয়ে গেল কিভাবে?!

(৭)

ফাহিমা আর সহ্য করতে পারছে না। সে অনেক ভেবেচিন্তে তার বড় বোন সায়মাকে ফোন দিলো। সায়মা ফোন পেয়েই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো। বলল,

- কি ব্যাপার? এত রাতে? কোন সমস্যা?

-- না আপু, সমস্যা না। কিন্তু একটা গুরুতর ব্যাপার নিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে চাইছি।

- কি ব্যাপার? বলে ফেল।

-- কিন্তু আপু তুমি কাউকে বলতে পারবে না। বাবাকেও না। সে জানতে পারলে আমাকে মেরে ফেলবে।

এই কথা বলেই ফাহিমা কাঁদতে লাগলো। সায়মা সান্ত্বনা দিলো। বলল,

- কাঁদিস না, আগে সমস্যার কথা বল। আমি আছিনা এত চিন্তা কিসের!

-- আপু, তোমরা সবাই একসময় নিষেধ করেছিলে সালমানকে বিয়ে করতে। আমি তোমাদের কথা শুনিনি। জোর করেছিলাম বলে তোমরা একসময় বিয়েতে রাজি হও। কিন্তু আপু, আমি আজ বুঝতে পারছি আমি চরম ভুল করেছি।

- কি হয়েছে তোর? সালমান মারধোর করেছে?

-- না আপু। ব্যাপারটা সেইরকম না। সালমান আমাকে চিনতে পারছে না!

- কি বললি তুই!? আমি বুঝতে পারিনি। পুরো ঘটনা খুলে বল!

ফাহিমা খুলে বলল, "সালমান অফিসে যায় কিন্তু বাসায় আর ফিরে আসেনা। তাকে অফিস থেকে ধরে বাসায় নিয়ে আসতে হয়। সে আমাকে চিনে, কিন্তু আমাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করেনা। এমনকি আমাদের বাড়িও সে চিনে না। এভাবে আমি আর থাকতে পারছি না!"

সব শুনে সায়মা বলল,

- তোর কি মনে হয় অভিনয় করছে? নাকি কোন রোগ?

-- প্রথমে আমি ভাবতাম অভিনয় করে। কিন্তু ছয়মাস যাওয়ার পরে এখন ভাবছি এত দীর্ঘসময় কেউ অভিনয় করতে পারবে না।

- এতদিন হয়ে গেছে? আমাকে বলিস নি কেন?

-- আমি জানিনা আপু, আমি কেন বলিনি!

- তুই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলি?

-- কিভাবে নিবো ডাক্তারের কাছে? ডাক্তারকে কি বলবো? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

- আমি নিজেও আছি দেশের বাইরে। আমিও আসতে পারবো না এখন, সময় লাগবে। তুই এক কাজ কর, তোর কি মনে হয় সালমানের কোন কাজ আছে এমন যা ও সবসময় করে? কখনো ভুলে যায় না? ভেবে বল।

-- এমন কিছু আমার মনে পড়ছে না।

- তুই এক কাজ কর। তুই ওর মোবাইল চেক কর। চেক করে আমাকে জানা। ও কারো সাথে নিয়মিত কথা বলে কিনা!

-- আচ্ছা আপু, আমি একটু পরে তোমাকে ফোন দিচ্ছি।

(৮)

- হ্যালো, আপু?

-- কি? কিছু পেয়েছিস?

- তেমন কাউকে সালমান ফোন করেনা। শুধু একজন বাদে।

-- কে সে?

- সালমানের মা।

-- প্রতিদিন ফোন করে?

- হ্যাঁ প্রতিদিন।

-- তোর শাশুড়ি তোদের সাথে থাকে না?

- নাতো। উনি গ্রামে থাকেন।

-- তুই এক কাজ করবি। কাল সকালে যেয়ে তোর শাশুড়িকে তোর বাসায় নিয়ে আসবি।

- এটা কিভাবে সম্ভব!

-- অবশ্যই সম্ভব। ঢাকা থেকে কুমিল্লা খুব দূরে না। আর এই কাজটির কথা সালমান যেনো ভুলেও না জানে।

- কিন্তু এতে লাভ কি হবে?

-- লাভ ক্ষতির চিন্তা পরে করবি। আগে চেষ্টা করে দেখ। সালমান তোকে চিনতে পারছে না, কিন্তু ওর মাকে ঠিকই চিনতে পারছে। এর অর্থ হচ্ছে, তোকে ওর মায়ের সাথে থাকতে হবে। ওর মা যখন বলবে তুই সালমানের বউ তখন সালমান অবশ্যই বিশ্বাস করবে। বুঝতে পারছিস?

- জ্বী আপু।

-- এই কাজটি করে আমাকে জানা।

(৯)

পরেরদিন...

সালমান অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে। কিন্তু পকেটে চাবি খুঁজে পাচ্ছে না। চাবি গেল কোথায়! ওই সময়ে বাড়িওয়ালা এসে উপস্থিত। বাড়িওয়ালা রসিক মানুষ। হেসে হেসেই বলল,

- চাবি আবার হারিয়ে ফেলেছো?

-- জ্বী চাচা। পকেটেই ছিল। খুঁজে পাচ্ছিনা।

- তুমি এই নিয়ে অসংখ্যবার চাবি হারালে। তাই এইবার তোমার তালার এক কপি আমি বানিয়ে রেখেছিলাম। এই নাও...

-- ধন্যবাদ চাচা।

- রাগ করলে নাকি? তোমার প্রাইভেসিতে নাক গলিয়েছি বলে? তোমার অনেকবার কষ্ট করে তালা ভাঙ্গতে হয়েছে বলে এই কাজ করেছি।

-- না না, রাগ করবো কেন! আমি আপনাকে অনেক বিশ্বাস করি।

- আচ্ছা। শুনে খুশি হলাম। যাও খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

সালমান গোসল করে খেতে বসেছিলো, ওর মা ফোন দিলো।

- কিরে বাবা, আজকে আমার খোঁজ নিলি না?

-- মা, এখনি ফোন দিতাম। আমি কখনো তোমাকে ফোন দেইনি এমন কি হয়েছে?

- না হয়নি। তুই এখন কোথায়?

-- আমি বাসায়। খেতে বসেছি।

- খেতে হবেনা। তুই চলে আয়।

-- কোথায় আসবো?

- ফাহিমার বাসায়।

-- ফাহিমার বাসায় তুমি কি করো?

- এলেই জানতে পারবি।

-- আমি কিভাবে আসবো মা? আমিতো সেই বাসা চিনি না!

- আজ অবশ্যই চিনবি তুই। তোর মা এখানে আছে।

মা ফোন কেটে দিয়েছে। সালমান চিন্তিত, ফাহিমা তার মাকে নিয়ে খেলা শুরু করেছে। এই খেলা শেষ করতে হবে।

আধাঘণ্টা পরে সালমান মুদি দোকানটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এরপরে বাসা কোনদিকে তা কোনভাবেই মনে পড়ছে না। তখনই ফাহিমা এসে উপস্থিত। বলল, "চলো সালমান, মাকে আমি বলেছিলাম তুমি বাসা চিনতে পারবে না। আমার কথাই সত্য হয়েছে।"

(১০)

সালেহা বেগম ফাহিমাকে বললেন, "মা, তুমি একটু অন্য ঘরে যাও। আমি সালমানের সাথে কথা বলবো।"

ফাহিমা চলে গেল। সালেহা বেগম ছেলের মুখোমুখি বসলেন,

- তুই কি শুরু করেছিস বল আমাকে?

-- আমি কি করলাম মা?

- ফাহিমা কে? তোর কি হয়?

-- ফাহিমার সাথে আমার অনেকদিনের সম্পর্ক ছিল। তারপর ওর বাবা ওর বিয়ে ঠিক করে। আমি প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওর বাবা রাজি হয়নি।

- তারপর?

-- তারপর ওর বিয়ে হয়ে যায়।

- কার সাথে?

-- আমি জানিনা।

- ফাহিমার বিয়ে হয়েছে তোর সাথে। এই দেখ বিয়ের ছবি।

সালমান বিয়ের ছবি গুলো দেখলো। সালেহা বেগম আবারো বললেন,

- ফাহিমা তোর বিয়ে করা বউ। এবার বিশ্বাস হয়েছে? তোর মা বলছে তোকে এই কথা।

-- হু!

- তাহলে কাল থেকে অফিস করে কোথায় ফিরবি? এই বাসায় নাকি অন্য কোথাও?

-- এই বাসায়!

- মনে থাকবে?

-- হু!

এক মাস পরে...

এই এক মাস সালমান ঠিকঠাক মতোই বাসায় ফিরলো। ফাহিমাকেও চিনতে পারলো। ফাহিমা অনেকদিন পরে বোনকে ফোন দিলো,

- আপু, কেমন আছো?

-- আমার কথা ছাড়! সালমানের কি অবস্থা?

- এখন ভাল।

-- আর কোন সমস্যা হয়নি তো?

- না হয়নি। এখন সব ঠিকঠাক।

-- যাক ভাল, এইবার বুড়িটাকে গ্রামে পাঠিয়ে দে। এর সাথে বাস করার কোন দরকার নেই।

- আমিও এটাই ভাবছিলাম। এইরকম গাও গেরামের মানুষের সাথে বাস করা যায় না। ঘিন ধরে গেছে গত এক মাসে।

-- ঠান্ডা মাথায় পাঠাবি। সালমান যেনো কিছু না জানে।

(১১)

সালেহা বেগম কথা গুলো শুনে অবাক হলেন না। আগে আর পরে এগুলো তার শুনতেই হবে তা তিনি ভাল করেই জানেন। তাই তিনি হাসিমুখেই বললেন,

- আমিও কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম গ্রামে চলে যাবো। শহরের পরিবেশ আমার বিষাক্ত লাগে। সালমানকে বলা হচ্ছিলো না।

-- সালমানকে বলতে হবেনা আপনার। ও একটা সমস্যা থেকে মাত্র উঠেছে। আপনি আজই চলে যান।

- আচ্ছা মা। আমি চলে যাব।

-- আর আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন তাই ধন্যবাদ।

সালেহা বেগম আর কিছু বললেন না, মুচকি হাসলেন। যোগ্য সন্তানেরা মাকে কখনো ধন্যবাদ দেয়না। মাকে ধন্যবাদ দিয়ে তার প্রাপ্য মেটানো যায় না তা তারা ভালই জানে।

ওইদিন সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত হয়ে গেল। কিন্তু সালমান বাড়ি ফিরলো না। ফাহিমা চিন্তায় পড়ে গেল। আবার আগের সমস্যা শুরু হলো কিনা কে জানে। ফাহিমা তার শাশুড়িকে ফোন দিলো।

- আম্মা, সালমান তো এখনো বাড়ি ফিরেনি! আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে।

-- চিন্তার কিছু নেই মা। সালমান আমার কাছে আছে!

- ও কুমিল্লা চলে গেছে?

-- হ্যাঁ মা।

- কখন?

-- আজ সন্ধ্যায়।

- মা, আমিও কি চলে আসবো?

-- এত রাতে তোমার আসতে হবেনা। কাল আমি সালমানকে পাঠিয়ে দেবো।

(শেষ)

- মা, জানালা খুলে দাও। চাঁদের আলো আসুক।

সালেহা বেগম জানালা খুলে দিলো। চাঁদের আলোয় ঘর আলোকিত হয়ে গেল। সালমান মাকে জিজ্ঞেস করলো,

- মা, তুমি কি আমার উপরে রাগ?

-- নারে বাবা। কি বলিস তোর মতো ছেলে জন্ম দিয়েছি বলে আমার গর্ব হয়।

- ফাহিমার উপরে?

-- না, ফাহিমার উপরেও আমার রাগ নেই।

- তাহলে তুমি আমাদের সাথে থাকো না কেন?

-- আমার শহরে থাকতে ভাল লাগেনা।

- তাহলে সবসময় কেন বলতে আমার বিয়ের পরে বউকে সাথে নিয়ে ঢাকায় থাকবে?

সালেহা বেগম চুপ করে রইলেন। সালমানের চাকুরি পাওয়ার আগে, এই কথাটি সবসময় তিনি বলতেন। সালমান আবার বলল,

- এক বছর আগে ফাহিমা তোমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলো। তুমি সারাদিন সিড়ির মধ্যে বসেছিলে। আমি অফিস থেকে ফিরে তোমাকে বাসায় ঢুকিয়েছিলাম। এরপর তুমি গ্রামে চলে এলে। এইজন্য তুমি আমাদের সাথে থাকো না।

সালেহা বেগম চমকে উঠলেন। সালমানের সব মনে আছে, সে ফাহিমার কথাও বলছে। তাহলে এতদিন যা করেছে সব কি ছিল অভিনয়?! সালেহা বেগম বললেন, তুই এতদিন সব অভিনয় করেছিস?

সালমান ঘুমানোর ভান ধরে রইলো। সালেহা বেগম হতাশ কন্ঠে বলল, "বাবা, আমি তোকে এই শিক্ষা দেইনি। কেন তুই এই কাজগুলো করলি?"

সালমান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, "বাবার মৃত্যুর পরে তুমি আমাকে মানুষ করার জন্য মানুষের বাসায় বাসায় কাজ করতে। তারা তোমাকে বাসি বাসি তরকারি দিতো। তুমি সেগুলো আমাকে খেতে দিতে না। সব নিজে খেয়ে ফেলতে। পরে পেট ব্যথায় কান্নাকাটি করতে। তোমার মনে পড়ে মা??

সালেহা বেগম চুপ করে রইলো। সালমান আবার বলল, "আমি দুঃখিত মা। তোমার সম্মান আমি রাখতে পারিনি।"

সালেহা বেগম কিছু বলতে পারলেন না। আর কিছু বলার ভাষা উনার জানা নেই। সালেহার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তে থাকলো।

সালমান এই অবস্থা দেখে বলল, "মা, কাঁদছো নাকি?"

সালেহা বেগম কাঁদো কাঁদো গলাতেই বললেন, "না"!

সালমান চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলো মায়ের গাল বেয়ে পড়া অশ্রুজল চিকচিক করছে।

সালমান আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, "মায়েদের সারাজীবনে এত কাঁদতে হয় কেন খোদা?"

|| সমাপ্ত ||



No comments

Powered by Blogger.

আসুন করনা সম্পর্কে সচেতন হই সুস্থ থাকি ।