ব্যবস্থাপনার/ ব্যবস্থাপকের কার্যাবলি বা ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া / Fanctions of Management/ Manager or Management Process অথবা ব্যবস্থাপনা একটি চলমান প্রক্রিয়া – ব্যখ্যা কর
ব্যবস্থাপনার/ ব্যবস্থাপকের কার্যাবলি বা ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া
Fanctions of Management/ Manager or Management Process
অথবা ব্যবস্থাপনা একটি চলমান প্রক্রিয়া
– ব্যখ্যা কর
প্রতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনে এতে নিয়োজিত উপায়
– উপাদানের যথাযথ ব্যবহার কার্য্কর ব্যবস্থাপকীয় কার্য্সমূহের ওপর নির্ভশীল। এরূপ কাজ
কতগুলো ধারাবাহিক ও পরস্পর নির্ভরশীল কর্র্প্রচেষ্টার সমষ্টি। তাই একে ব্যবস্থাপনা
প্রক্রিয়া বলে। প্রতিষ্ঠান যতদিন চলে এ প্রক্রিয়াও ততদিন অব্যাহত থাকে । তাই একে একটি
চলমান প্রক্রিয়া নামেও অভিহিত করা হয়।
নিম্নে
একজন ব্যবস্থাপকের বা ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার প্রধান কার্যাবলি ছকে তুরে ধরা হলো :
১. পরিকল্পনা ২. সংগঠন ৩. কর্মীসংস্থান ৪. নির্দেশনা |
৫. প্রেষণা ৬. সমন্বয় ৭. নিয়ন্ত্রণ |
উপরে
ছকে প্রদর্শিত কার্য্সমূহ নিম্নে আলোচিত হলো :
১. পরিকল্পনা
(Planning) : পরিকল্পন ব্যবস্থাপনার বা ব্যবস্থাপকের প্রথম ও মৌলিক কাজ। Newman বলেন,
ভবিষ্যতে কি করতে হবে তার অগ্রিম সিদ্ধান্তকেই পরিকল্পনা বলে। (planning is deciding in advance what is to be done) । নিউম্যান –
এর ভাষায় পরিকল্পনা হলো অভিক্ষেপিত কর্ম্সূচি। (Projected course of action) । যার মধ্যে নিম্নেক্ত বিষয়সমূহ পড়ে –
ক) ভবিষ্যতে কি করতে হবে ;
খ) কত সময়ের মধ্যে করতে হবে ;
গ) কখন ও কোথায় করতে হবে ; এবং
ঘ) কে বা কারা তা সম্পাদন করবে।
ধরা যাক, একটি কলেজের কতিপয় মেধাবী ছাত্র-
ছাত্রীকে শিক্ষা সফরে পাঠানো হচ্ছে। তাহলে কোথায় ও কখন যাওয়া হবে, কিভাবে ও কত সময়
থাকা হবে, কোথায় থাকা হবে ইত্যাদি বিষয় পূর্বেই নির্ধারণ করা আবশ্যক। এর সবটাই পরিকল্পনা।
২. সংগঠন (Organizing) : উপকরণাদি সংগঠিতকরণ ও কার্যোপযোগীকরণের কাজকেই সংগঠন বলে। Prof.
Haney
– এর মতে, কতিপয় সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্ত উৎপাদনের বিশেষায়িত উপকরণসমূহের সুষ্ঠ
সমন্বয় হলো সংগঠন। (Organisation is
harmonious adjustment of specialized parts for the accomplishment of some
common purpose or purposes.) কার্য্কর
সংগঠন প্রতিষ্ঠা ছাড়া মানবীয় ও বস্তুগত উপকরণাদির কা্র্য্কর ব্যবহার ও লক্ষর্জ্ন সম্ভব
নয়। এক্ষেত্রে একজন ব্যবস্থাপকের কার্য্সমূহ নিম্নরূপ :
ক) কার্যাদি চিহ্নিতকরণ ও বিভাজন ;
খ) প্রতিটা বিভাগের কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব নিরূপণ
ও অর্প্ণ এবং
গ) প্রতিটা ব্যক্তি ও বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক্
নির্ধারণ প্রতিষ্ঠ।
৩. কর্মীসংস্থান
(Staffing) : প্রতিষ্ঠনের জন্য প্রয়োজনীয় জনশক্তি সংগ্রহ ও নির্বাচন, কর্মীদের মানোন্নয়ন
ও সংরক্ষণ এবং কর্মীদেরকে এগিয়ে নেয়ার সকল প্রয়াসকে কর্মীসংস্থান বলে ।
R.M. Hodgetts – এর মতে, কর্মীসংস্থান হলো কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচন, প্রশিক্ষণ
এবং প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের উন্নয়ন করার একটি প্রক্রিয়া। (Staffing is the process of recruiting,
selecting,training and developing
organizational personnel.) অর্থাৎ কর্মীসংস্থান হলো
-
ক) কি মান ও পরিমাণ কর্মী জোগাড় করতে হবে তা
নির্ধারণ করা ;
খ) কর্মী সংগ্রহের উৎস ঠিক করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া
;
গ) যোগ্য কর্মী নির্বাচন ও নিয়োগ করা ;
ঘ) কর্মীদের মান উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেয়া এবং
ঙ) কর্মীদের ধরে রেখে অবসর দান পর্যন্তি এগিয়ে
নেয়ার ব্যবস্থা করা।
৪. নির্দেশনা
(Directing) : কর্মীদের আদেশ দান, প্রয়োজনীয় তত্ত্বাবধান ও অনুসরণ (Follow-up) করার কাজকেই নির্দেশনা বলে । J.L. Massie (ম্যাসী) বলেন,“
অধস্তনদের প্রকৃত কর্মপ্রেচেষ্টা যেন একটা সাধারণ লক্ষ্য পানে পরিচালিত হয় তার ধারাবাহিক
কর্মপ্রয়াসই হলো নির্দেশনা।” (Directing is
the process by which actual
performance of subordinates is guided toward common goals.) নির্দেশনা প্রক্রিয়ার
অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ নিম্নরূপ :
ক) অধস্তনদের আদেশ ও নির্দেশ প্রদান করা ;
খ) এ জন্য প্রয়োজনীয় উপদেশ, পরামর্শ ও উৎসাহ
দেয়া ;
গ) কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখা এবং
ঘ) ভুল হলে সংশোধন করা।
৫. প্রেষণা (Motivating) : কর্মীদেরকে কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত করার কাজকেই প্রেষণা
বলে। M.
Jucious
(জুসিয়াস) এর মতে,“প্রত্যাশিত ফল লাভের জন্য কাউকে উদ্দীপ্ত বা উৎসাহিত করার কাজই হলো
প্রেষণা।” (Motivation is the act of
stimulating some one or oneself to get a desired resrlt.) । কথায় আছে ‘ঘোড়াকে
জোর করে পানিতে নামানো যায় কিন্তু পান করান যায় না’। তাই কর্মীদের শুধুমাত্র নির্দেশ
দিলেই চলে না , কর্মীরা যাতে স্বতঃস্ফর্তভাবে সে কাজ করে এ জন্য তাদের কাজের প্রতি
আগ্রহ সৃষ্টি এবং সে আগ্রহ ধরে রাখার জন্য ব্যবস্থাপনাকে প্রয়াস চালাতে হয়। সংক্ষেপে
প্রেষণা হলো –
ক) কর্মীদের প্রয়োজন সম্পর্কে জানা ;
খ) প্রয়োজন পূরণে কি করা উচিত তা সনাক্ত করা
;
গ) আর্থিক ও অনার্থিক বিভিন্ন উপায়ে প্রেষণা
প্রদান করা এবং
ঘ) কর্মীদের উদ্বুদ্ধকরণে বিভিন্ন কর্মসূচি
গ্রহণ করা।
৬. সমন্বয় (Co-ordinating) : প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বিভিন্ন ব্যক্তিও বিভাগের কার্যাবলিকে একতানে গ্রথিত,
সংযুক্ত ও সুসংবদ্ধ করার প্রক্রিয়াকে সমন্বয় বলে। Prof. Newman বলেন, একদল লোকের কর্ম্’প্রচেষ্টাকে
সংযুক্ত ও একীভূত করার সাথে সমন্বয় সম্পর্ক্’যুক্ত।(Co-ordination deals with synchronizing and unifying the actions of a
group of people.) খেলার মাঠে যদি নিজ দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সমন্বয় বা পারস্পরিক
সমঝোতা না থাকে তবে দল কখনও জয়লাভ করতে পারে না। তাই ব্যক্তি ও বিভাগের কাজের মধ্যে
সমন্বয় সাধন ব্যবস্থাপনার অন্যতম কাজ। সমন্বয় প্রক্রিয়ার মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো
পড়ে –
ক) প্রত্যেক বিভাগের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা
গ্রহণ ;
খ) প্রতিটা বিভাগের কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা
এবং
গ) কাজের অগ্রগতিতে সমন্বয় সাধন।
৭. নিয়ন্ত্রণ
(Controlling) : নিয়ন্ত্রণ হলো ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার সর্’শেষ ধাপ । পরিকল্পনার আলোকে
প্রতিষ্ঠানের কার্যাদি সম্পন্ন হচ্ছে কিনা তা মূল্যায়ন, বিচ্যূতি নিরূপণ, কারণ নির্ণ্য়
ও তা বিশ্লেষণ এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনীমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ বলে।
H. Fayol – এর মতে ,“নিয়ন্ত্রণ হলো গৃহীত পরিকল্পনা , জারিকৃত নির্দেশনা ও প্রতিষ্ঠিত
নীতি অনুযায়ী কার্য্ পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করা। “অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ হলো –
ক) নির্দিষ্ট সময়ে সম্পাদিত কাজের পরিমাপ
;
খ) পরিকল্পনার সাতে কার্য্ফলের তুলনা ;
গ) বিচ্যুতি নিরূপণ ও কারণ অনুসন্ধান এবং
ঘ) প্রয়োজনীয় সংশোধনীমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
উপসংহারে বলা যায়, ব্যবস্থাপনা তার লক্ষর্জ্ নে এবং উপায় – উপকরণের কার্য্কর ব্যবহারে উপরোক্ত কার্যাবলি ধারাবাহিকভাবে সম্পাদন করে। পরস্পর নির্ভ্র’শীল এ সকল ধারাবহিক কাজ প্রতিষ্ঠানে যতদিন চলে ততদিন সময়ের ধারায় চক্রাকরে আবর্তিত হতে থাকে। বিষয়টি নিম্নের রেখাচিত্রে তুলে ধরা হলো :
No comments