TjT

করনা প্রতিরোধে হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন। অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ্ করা থেকে বিরত থাকুন। অ্যালকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতের তালুতে নিয়ে ( 20 সেকেন্ড ) ভাল করে পরিষ্কার করুন। ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনা যুক্ত ডাস্টবিনে ফেলুন। পরিচিত বা অপরিচিত ব্যক্তির সাথে হাত মেলানো বা আলিঙ্গন করা থেকে বিরত থাকুন। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।

গণমাধ্যম

গণমাধ্যম


tjt79.blogspot.com



গণমাধ্যম সমাজ জীবনের দর্পন স্বরূপ। এটি এখন আমাদের জীবনের, সমাজের একটি অংশ। বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের প্রভাব প্রতিপত্তি নিঃসন্দেহে সর্বজন স্বীকৃত। যে পৃথিবীতে আমরা এখন বাস করছি তার এক একটা দিনের ইতিহাস হলো সেই দিনে গণমাধ্যমগুলোর বিষয়বস্তু। আমাদের চলমান জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি কাজ, ছোট-ছোট ঘটনাগুলোই প্রতিফলিত হয় গণমাধ্যমে। তাই জীবন ও সমাজের সাথে গণমাধ্যম ওতোপ্রোতভাবে মিশে আছে। গণমাধ্যম একদিকে যেমন সমাজের চলমান চিত্র তুলে ধরছে তেমনি অন্যদিকে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থাকে ভাঙছে, গড়ছে, প্রভাবিত করছে।



গণমাধ্যমের ইতিহাস:


প্রথম নিয়মিত সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছিল জার্মানিতে, ১৬০৯ সালে। ১৭০২ সালে ডেইলি কুর‌্যান্ট’ নামে বৃটেনে প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় ১৭৮০ সালে-‘বেঙ্গল গেজেট’ নামে। বাংলায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র ১৮১৮ সালে ‘বাঙ্গাল গেজেট’। আর তৎকালীণ পূর্ব বঙ্গে ১৮৪৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ‘রঙ্গপুর বার্তাবহ’। এর পর ১৮৯৪ সালে রেডিও, ১৯১৯ সালে চলচ্চিত্র এবং ১৯২৫ সালে টেলিভিশন আবিষ্কার হলে গণমাধ্যম জগতে বিপ্লব সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে প্রথম রেডিও সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৩৯ সালে আর টিভি সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৬৪ সালে।


গণমাধ্যমের প্রকার ও ব্যবহার:


প্রকাশ ও প্রচারের ধরণভেদে গণমাধ্যম তিন ধরণের হয়ে থাকে। প্রথমত, মুদ্রণ মাধ্যম যেমন সংবাদপত্র, বই, ম্যাগাজিন। দ্বিতীয়ত, ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম যেমন- রেডিও, টিভি, চলচ্চিত্র। তৃতীয়ত, ‘নিউ মিডিয়া বা নতুন মাধ্যম’। এটি গণমাধ্যম সংক্রান্ত নতুন ধারণা। তথ্য প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য সাফল্যের ফলে সৃষ্টি হয়েছে সক্রিয় ও কার্যকরী বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম। যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি। এগুলোর বৈশিষ্ট্য ও ভূমিকা অনেকটা অন্যান্য গণমাধ্যমের মতোই। তাই এগুলোকে বলা হচ্ছে নিউ মিডিয়া। এর মধ্যে অনলাইন সংবাদপত্রও অন্তর্ভুক্ত। আমাদের জীবনে গণমাধ্যমের ব্যবহার এখন অবধারিত একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা পত্রিকা পড়ছি, তাৎক্ষণিক সংবাদ পেতে রেডিও শুনছি, টিভি দেখছি। অবসরে বিনোদন পেতে রেডিও, টিভি, চলচ্চিত্র, বই ব্যবহার করছি। মানুষ প্রধানত চারটি কাজে গণমাধ্যম ব্যবহার করে। তথ্য জানার জন্য, কোনো বিষয়ে শিক্ষা নেয়ার জন্য, বিনোদন পেতে এবং প্রণোদিত হওয়ার জন্য। এখন সারাবিশ্বে অধিকাংশ মানুষই কোনো না কোনো গণমাধ্যম ব্যবহার করে।


গণমাধ্যমের দায়িত্ব:


সমাজ-সংস্কৃতি ও দেশের মানুষের প্রতি গণমাধ্যমের কিছু দায়িত্ব থাকে। গণমাধ্যমের দায়িত্ব হলো প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থাকে সবার সামনে তুলে আনা। যাতে মানুষ তার সমাজকে সঠিকভাবে জানতে পারে। আবার বিদ্যমান অসংগতিগুলো তুলে ধরাও গণমাধ্যমের দায়িত্ব। সততা, বস্তুনিষ্ঠতা, ভারসাম্য ও উচ্চমানের পেশাদারিত্বের মাধ্যমে মানুষকে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য দেয়া গণমাধ্যমের অন্যতম দায়িত্ব। সমাজের বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান ও আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকেই আত্মনিয়ন্ত্রিত হয়ে মানুষকে তার সমাজের আদর্শ, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানানো গণমাধ্যমের দায়িত্ব। অপরাধ, সহিংসতা, জন-অসন্তোষ সৃষ্টিকারী তথ্য প্রচার করা থেকে বিরত থাকা গণমাধ্যমের দায়িত্ব।


গণমাধ্যমের প্রভাব:


বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের চরম উৎকর্ষ ও ভূমিকার কারণে আমরা অনেক বেশি গণমাধ্যমমুখী হয়ে পড়েছি। ফলে আমরা প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছি। গণমাধ্যম বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মানুষকে অবগত রাখে। মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা মানুষকে জানিয়ে দিচ্ছে। মানুষ ও সমাজের ওপর গণমাধ্যমের প্রভাব এত বেশি যে গণমাধ্যম চাইলেই মানুষের কোনো বিষয় ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে পারে আবার নেতিবাচকভাবেও দেখতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরাকের ওপর হামলা চালায় তখন পশ্চিমা গণমাধ্যম প্রচার করে ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে। আর তা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ফলে হামলার স্বপক্ষে জনমত গড়ে ওঠে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় গণমাধ্যমের এই প্রচারণা ভুল ছিল। গণমাধ্যম মানুষের মধ্যে গণজাগরণ তুলতে পারে। আবার গণমাধ্যম ভুল ও বিকৃত তথ্য দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে। খুব সামান্য একটি বিষয়কেও গণমাধ্যম তার উপস্থাপনের মাধ্যমে বড় করে তুলতে পারে।


বাংলাদেশে গণমাধ্যম ব্যবস্থা:


১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করলেও এদেশের সংবাদমাধ্যম স্বাধীন হতে পারেনি। ১৯৭৩ সালের মুদ্রণ ও প্রকাশনা আইন এবং ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সীমিত করে। ১৯৯১ সালে আইন সংশোধন করা হলেও গণমাধ্যম ব্যবস্থা সুরক্ষিত হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক কিংবা স্বৈরতান্ত্রিক উভয় শাসনামলেই রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সরকারি নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হচ্ছে। প্রত্যেক সরকারই বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। ২০০০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব গণমাধ্যম বিপ্লব ঘটেছে। এখন ঘোষণাপ্রাপ্ত পত্রিকার সংখ্যা প্রায় ১৫৯৭টি। বেসরকারি টিভি চ্যানেল রয়েছে দুই ডজনেরও বেশি। বেসরকারি রেডিও এখন এক ডজনের বেশি। এছাড়া গড়ে উঠেছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম। কিন্তু এসবের লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে নেই কোনো স্বচ্ছতা। কালো টাকার মালিক, ভূমিদস্যু, অসাধু ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এসবের মালিক। ফলে গণমাধ্যমে জনস্বার্থ নয় ব্যক্তি স্বার্থ প্রাধান্য পাচ্ছে। গণমাধ্যমগুলোতে সংখ্যালঘু, নারী, বহুত্ববাদী গোষ্ঠীরা থেকে গেছে উপেক্ষিত। আমাদের গণমাধ্যমগুলোর সততা, বস্তুনিষ্ঠতা, নৈতিকতা ও পেশাদারিত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তাই সার্বিকভাবে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ব্যবস্থা হতাশাব্যঞ্জক।



বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম:


গণমাধ্যম মানুষের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করে। গণমাধ্যম যখন স্বাধীনভাবে চলে, বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে, জনগণের হয়ে কথা বলতে পারে তখন স্বভাবতই সেখানে গণতন্ত্র আছে বলে ধরে নেয়া যায়। তাই গণমাধ্যমকে বলা হয় গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। গণমাধ্যম গণতন্ত্রকে সুসংহত করে। আর স্বাধীন গণমাধ্যম গণতন্ত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষেরই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। গণমাধ্যম মানুষকে মত প্রকাশের জায়গা তৈরি করে দেয়। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকা-কে গণমাধ্যম সকলের সামনে নিয়ে আসে। এতে করে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয় প্রত্যেককেই। তাই তাদেরকে দেশ ও দশের কথা ভাবতে হয়। এর ফলে গণতন্ত্রের ভিত্তিও পাকাপোক্ত হয়।


প্রচারণার হাতিয়ার গণমাধ্যম:


যদিও গণমাধ্যমের নিজস্ব কর্মপদ্ধতি, নীতি ও বাকস্বাধীনতার অধিকার রয়েছে তবুও বেশির ভাগ সময়ই গণমাধ্যম ব্যবহৃত হয় শাসক শ্রেণির প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে। এর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো আমাদের বাংলাদেশ টেলিভিশন। প্রতিটি সরকারই একে ব্যবহার করেছে নিজেদের প্রচারণা আর মতাদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার হাতিয়ার হিসেবে। এমনকি সরকার বদলের সাথে সাথেই এর কর্মকর্তা, কর্মচারী, কলা-কুশলী এমনকি সংবাদ পাঠক পাঠিকারাও বদলে যায়। শাসক শ্রেণি নিজেদের অন্যায়, অবিচার, শোষণ থেকে জনগণের চোখ ফেরাতে গণমাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করে। নিজেদের গুণগান ও উন্নয়নের চমক দিয়ে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করতে গণমাধ্যমগুলোকে বাধ্য করে। ফলে গণমাধ্যম সরকারের নিয়ন্ত্রণে থেকে হয়ে ওঠে সরকারি প্রচারণার মাধ্যম।



প্রয়োজন গণমানুষের গণমাধ্যম:



গণমাধ্যমকে হতে হবে জনকল্যাণমুখী। জনগণের কল্যাণের জন্য গণমাধ্যমকে কাজ করতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে জনস্বার্থ। সরকার বা মালিকের নয় বরং জনগণের মুখপাত্র হিসেবে গণমাধ্যমগুলোকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের উচিত নয়। গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে তবেই তা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। সমাজ ও দেশের প্রতি দায়িত্বশীল থেকে গণমাধ্যমকে নিজের কর্ম-পরিকল্পনা ঠিক করতে হবে। বস্তুনিষ্ঠভাবে সব কিছু সকলের কাছে তুলে ধরতে হবে। তবেই গণমাধ্যম গণমানুষের জন্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারবে।



গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের রয়েছে প্রবল আকর্ষণ। গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য আমাদের জ্ঞানের এক বিরাট উৎস। গণমাধ্যম আছে বলেই পৃথিবীর কোথায় কি ঘটছে আমরা তা মুহূর্তেই জানতে পারছি। বহু দূরে ঘটেও সব কিছুই যেন ঘটছে আমাদের চোখের সামনে। তা সম্ভব হচ্ছে শুধুমাত্র গণমাধ্যমের কল্যাণেই। কিন্তু এই গণমাধ্যম আমাদের জন্য যেমন ইতিবাচক তেমনি নেতিবাচক। তাই মানুষ হিসেবে নিজের বিচার-বুদ্ধি দিয়ে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে গণমাধ্যমের কোনো দিকগুলো দ্বারা আমরা প্রভাবিত হব।





No comments

Powered by Blogger.

আসুন করনা সম্পর্কে সচেতন হই সুস্থ থাকি ।