TjT

করনা প্রতিরোধে হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন। অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ্ করা থেকে বিরত থাকুন। অ্যালকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতের তালুতে নিয়ে ( 20 সেকেন্ড ) ভাল করে পরিষ্কার করুন। ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনা যুক্ত ডাস্টবিনে ফেলুন। পরিচিত বা অপরিচিত ব্যক্তির সাথে হাত মেলানো বা আলিঙ্গন করা থেকে বিরত থাকুন। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।

ইভটিজিং



“জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী, শস্য- লক্ষ্মী নারী
সুষমা- লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি।”
- কাজী নজরুল ইসলাম
মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। নারী মাতৃরূপে মমতা দেয়, ভাগনী রূপে স্নেহ দেয়, আবার প্রেয়সী রূপে দেয় প্রেরণা। কিন্তু এই পুরুষশাসিত সমাজ যুগে যুগে নারীকে
তাঁর অধিকার থেকে করেছে বঞ্চিত, নানা ভাবে করেছে শোষণ। একবিংশ শতাব্দীতে নারী তাঁর হাজার বছরের অবরুদ্ধ জীবনের গ্লানি থেকে মুক্তি পেয়েছে বটে কিন্তু এখনো পায়নি তাঁর পরিপূর্ণ সামাজিক মর্যাদা। নারী সত্তার অপমৃত্যু ঘটাতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে এর আদিম কর্দয প্রয়াস, যার নাম ‘ইভটিজিং’। সমাজের প্রতিটি স্তরে এক ভয়াবহ সংক্রামক ব্যাধি রূপে ছড়িয়ে পড়েছে ইভটিজিং। পুরুষশাসিত এই সমাজ ইভটিজিং এর মাধ্যমে মেয়েদেরকে ঠেলে দিচ্ছে করুণ পরিণতির দিকে।


ইভটিজিং কী:

ইভটিজিং একটি ইংরেজি শব্দ যার অর্থ নারীদের উত্যক্ত করা। ‘ইভ’ হলো ‘হাওয়া’- যে পৃথিবীর প্রথম নারী। সুতরাং ইভটিজিং নারীদেরকে উত্যক্ত করাকে নির্দেশ করে। নারীদেরকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করাই ইভটিজিং। একজন নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য করা, তাকে হেয় করে অশালীন কথা বলা, মানুষের সামনে অপদস্থ করা ইভটিজিং-এর মধ্যে পড়ে।

ইভটিজিং এর প্রভাব:

সমাজে ইভটিজিং এর ভয়াবহ প্রভাব প্রতিদিনের সংবাদপত্রগুলোই আমাদেরকে বলে দেয়। সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, এবং নিম্নবিত্ত সকল শ্রেণির মেয়েরাই ইভটিজিং এর শিকার হয়। শতশত মেয়েরা ইভটিজিং-এর শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। এছাড়া ইভটিজিং এর কারণে অনেক নারী লেখাপড়া বন্ধ করে দিচ্ছে যেটি দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের জন্য বিরূপ প্রভাব বয়ে আনবে। এর ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতাও নষ্ট হচ্ছে।

ইভটিজিং কেন হয় এবং কারা করে:

সমাজে ছেলেদের উচ্ছৃঙ্খল মানসিকতার জন্য ইভটিজিং হয়ে থাকে। ইভটিজিং-এর মাধ্যমে মেয়েদের হয়রানি করে তারা এক ধরণের বিকৃত প্রশান্তি লাভ করে। নারীবাদী সংগঠন "women for women'' এবং "Steps toward Development"-এর যৌথ সমীক্ষায় ইভটিজিংকারীদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়- উচ্চবিত্ত ও প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান ১৫% উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ৬০% এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান ২৭% ইভটিজিং-এর সাথে জড়িত। আর এটা থেকে প্রমাণিত হয় যে ইভটিজিং-এ সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই বেশি জড়িত।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইভটিজিং:

বাংলাদেশে একটি উন্নয়নশীল দেশ। এখানে সবশ্রেণির মেয়েরাই ইভটিজিং-এর শিকার হয় আমাদের দেশে ১২-১৪ বছরের মেয়েরা ২৮.৩৩%। ১৪-১৬ বছরের মেয়েরা ৫৬.৬৭% এবং ১৬-১৮ বছরের মেয়েরা ১৫% ইভটিজিং-এর শিকার হয়। এছাড়া একক পরিবারের মেয়েরা ৮৮.৩৩% এবং যৌথ পরিবারের মেয়েরা ১১,৬৭% ইভটিজিং-এর শিকার হয়।

নৈতিকতার অবক্ষয় ও ইভটিজিং:

ইভটিজিং ও নৈতিকতার অবক্ষয় একটি অন্যটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইভটিজিং এর প্রধান কারণ হচ্ছে নৈতিকতার অবক্ষয়। এখনকার সমাজে নৈতিকতার অবক্ষয় চরম আকার ধারন করেছে। এই পরিস্থিতি যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যার ফলে তারা আর্দশহীন হয়ে যাচ্ছে। আজকের যুবসমাজ শিক্ষার মূল চেতনাকে অনুধাবন করতে পারছে না ফলে তারা নিজেদেরকে সুপথে পরিচালিত করতে পারে না। নানা ধরণের প্রতিকূল অবস্থার কারণে যুব সমাজ বিপথগামী হচ্ছে। আর এভাবেই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মতো ইভটিজিং একটি দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

ইভটিজিং-এর ধরণ:

বিভিন্ন সময়ে ইভটিজিং বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। ইভটিজিং কারীরা বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে ইভটিজিং করে থাকে। ২০০৯ সালে ১৪ মে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ইভটিজিং দূর করার জন্য কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়। যে ধরণের কাজগুলো ইভটিজিং বলে গণ্য হয় সেগুলো হলো-

যেকোনো ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য বা রসিকতা।
গায়ে হাত দেয়া বা দেওয়ার চেষ্টা করা।
ই-মেইল, এসএমএস, টেলিফোনে বিড়ম্বনা।
পর্নোগ্রাফি বা যেকোনো ধরণের চিত্র, অশ্লীল ছবি, দেয়াল লিখনের মাধ্যমে বিরক্ত করা।
অশালীন উক্তিসহ আপত্তিকর কোনো ধরণের কিছু করা, কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে সুন্দরী বলা।
কোনো নারীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন বা কোনো চাপ প্রয়োগ করা।
মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সর্ম্পক স্থাপন করা, যৌন সম্পর্ক স্থাপনের দাবি বা অনুরোধ করা প্রভৃতি।


ভিন্ন আঙ্গিকে ইভটিজিং:

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ইভটিজিং-এ এসেছে নতুনত্ব। ফেসবুকের মাধ্যমে ইভটিজিংকারীরা অশালীন ছবি বা কথার্বাতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফেসবুক হ্যাকিং-এর মাধ্যমে একজনের আইডি নিয়ে সেটিতে বিভিন্ন প্রকার সম্মানহানিকর ছবি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে। এছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে কল করে ইভটিজিং করা হচ্ছে। ইভটিজিংকারীরা ফোনকেও বেছে নিয়েছে ইভটিজিং-এর হাতিয়ার স্বরূপ।

ইভটিজিং প্রতিরোধে করণীয়:

নারীর প্রতি এই অমানবিক নির্যাতন দূর করার জন্য সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। নাগরিক সচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রতিবাদের সম্বনয়ে ইভটিজিং প্রতিরোধ সম্ভব। নিচের বিষয় গুলো ইভটিজিং প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে-

সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি:

সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে হবে। তাতে ইভটিজিং প্রতিরোধ সম্ভব হবে।

আইন প্রণয়ন:

ইভটিজিংকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং এর যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।

সচেতনতা বৃদ্ধি:

সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ইভটিজিং প্রতিরোধের অন্যতম উপায়।

শিক্ষার বিকাশ:

শিক্ষা মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশে সাহায্য করে। এই শিক্ষার আলো যদি যুবসমাজে ছড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে তারা ভালো-মন্দ পার্থক্য করতে পারবে এবং খারাপ পথ থেকে সরে আসবে।

পারিবারিক মূল্যবোধ:

বাবা-মায়ের উচিত তাদের শিশুর মনুষ্যত্ব যেন পরিপূর্ণ ভাবে বিকশিত হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। ছেলেরা যেন বাজে কোনো কাজে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে সর্তক দৃষ্টি রাখা। তাহলে ইভটিজিং কমে আসবে।

নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি:

পুরুষ যখন নারীকে সম্মান করতে শিখবে কেবলমাত্র তখনই নারীদের প্রতি অশালীন আচরন করতে তাদের বিবেক বাধা দিবে। সুতরাং নারীর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

কর্মসংস্থান বৃদ্ধি:

সকল বেকার যুবকের জন্য কাজের ব্যবস্থা করলে তারা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে এবং ইভটিজিং থেকে দূরে অবস্থান করবে।

পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা:

যে সকল জায়গাগুলোতে সাধারণত ইভটিজিং হয়ে থাকে যেমনঃ স্কুল, কলেজ, শপিং সেন্টার, ব্যস্ততম মোড় ইত্যাদি স্থানে পুলিশের তৎপরতা বাড়াতে হবে।

মাদক দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাস:

মাদকসক্ত হয়ে যুবসমাজ তাদের বিবেক হারিয়ে নারীকে ইভটিজিং করে যাচ্ছে। তাই ইভটিজিং রোধে মাদকদ্রব্যের নিয়ন্ত্রন করা প্রয়োজন।



“নারীর বিরহে নারীর মিলনে, নর পেল কবি-প্রাণ
যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গান
নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে
জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে।”
- কাজী নজরুল ইসলাম
নারী-পুরুষ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, একে
অপরের সহযোগী। নারীর প্রতি পুরুষের সহিংসতা সমাজকে ভালো কিছু দিতে পারে না। এর ফলে সমাজ শুধু পিছিয়েই পড়ে । নারীর প্রতি পুরুষের সম্মান ও মর্যাদা প্রদান বদলে দিতে পারে আমাদের সমাজজীবন, বন্ধ করতে পারে ইভটিজিং এর মতো ঘৃন্য অপরাধ।



No comments

Powered by Blogger.

আসুন করনা সম্পর্কে সচেতন হই সুস্থ থাকি ।